Recent Post

সেন্ট মার্টিন: বাংলাদেশের নীল জলরঙের ক্যানভাস
সেন্ট মার্টিন: বাংলাদেশের নীল জলরঙের ক্যানভাস
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত ছোট্ট কিন্তু অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, যা স্থানীয়ভাবে "নারিকেল জিঞ্জিরা" নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ এবং এখানকার নীল জল, সাদা বালু, শান্ত পরিবেশ আর প্রবাল প্রাচীর যেন পর্যটকদের জন্য স্বর্গ।
সেন্ট মার্টিনে কী কী আছে?
সেন্ট মার্টিন মূলত একটি ছোট্ট দ্বীপ, যার আয়তন মাত্র ৮ বর্গকিমি। কিন্তু এই ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অগণিত প্রাকৃতিক রত্ন:
- নীল সমুদ্র ও সাদা বালুকাবেলা
নীলচে সবুজ জলরাশি ও সূর্যকিরণে ঝলমল বালির সৈকত আপনাকে অভিভূত করবে। - প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য
দ্বীপের চারপাশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রবাল ও ছোট ছোট সামুদ্রিক প্রাণী, বিশেষ করে ভাটার সময় এগুলো পরিষ্কার দেখা যায়। - ছেঁড়াদ্বীপ (Chera Dwip)
সেন্ট মার্টিন থেকে হেঁটে বা নৌকায় যাওয়া যায় এই ছোট দ্বীপে। ভাটার সময় হেঁটে পৌঁছানো যায় এবং জোয়ারে এটি দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে তাই ‘ছেঁড়া’ দ্বীপ বলা হয়। - সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অনবদ্য দৃশ্য
দ্বীপের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনি দেখতে পাবেন রঙে রঙে মাখানো আকাশ ও রোদের খেলা। - মহেশখালী বা টেকনাফে ফেরার পথে গঙ্গাফেরু খাল ও পাহাড়ি সৌন্দর্য
যাত্রার পুরোটা পথই একটি আলাদা অভিজ্ঞতা। - কোন জায়গায় মানুষ বেশি যায়?
সেন্ট মার্টিনের মূল সমুদ্র সৈকত (Main Beach): এখানেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ভিড় করে, বিশেষ করে দুপুর ও বিকেলে। - ছেঁড়াদ্বীপ (Chera Dwip): এটি পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় জায়গা, যেখানে কোরাল ও স্নিগ্ধতা একত্রে মিলে যায়।
- পশ্চিম পাশের সৈকত: সূর্যাস্ত দেখার জন্য আদর্শ স্থান, তুলনামূলকভাবে কিছুটা নিরিবিলি।
সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার সেরা সময়?
সেন্ট মার্টিন ঘোরার সবচেয়ে ভালো সময় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত।
এই সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক ও শান্ত থাকে এবং সমুদ্রও রূপ নেয় স্নিগ্ধ নীল রঙে।
এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময় ঝড়ঝঞ্ঝা ও সাগরের উত্তাল অবস্থার জন্য অনুপযুক্ত। অনেক সময় নৌযান চলাচলও বন্ধ থাকে।
কী কী খাবার ভালো পাওয়া যায়?
সেন্ট মার্টিন মূলত সামুদ্রিক খাবারের স্বর্গ।
কিছু দারুণ স্বাদের খাবার হলো:
- ঝাল-ঝোল চিংড়ি ও কাঁকড়া ভুনা
- তাজা রূপচাঁদা, লইট্টা ও কোরাল মাছ ভাজা
- নারিকেলের দুধে রান্না করা সি-ফুড কারি
- নারিকেল দিয়ে রান্না করা ডাল ও ভর্তা
- টাটকা ডাব ও নারকেলজল
এছাড়া সন্ধ্যায় সমুদ্রের ধারে বসে গ্রিল মাছ খাওয়ার অভিজ্ঞতা চিরস্মরণীয়।
স্থানীয় মানুষের ব্যবহার কেমন?
সেন্ট মার্টিনের মানুষ খুবই মিশুক, অতিথিপরায়ণ এবং পরিশ্রমী।
দ্বীপবাসীরা সাধারণত পর্যটকদের যথেষ্ট সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়।
তারা বাঙালি ও রোহিঙ্গা মিশ্র সংস্কৃতির মাঝে বেড়ে উঠেছে, এবং পর্যটকদের সাহায্য করতেই অধিক আগ্রহী।
তবে কিছু পর্যটন ব্যবসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির প্রবণতা দেখা যায়, দর কষাকষি এখানে কার্যকর হতে পারে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা/চট্টগ্রাম → কক্সবাজার (বাস/প্লেন)
কক্সবাজার → টেকনাফ (বাস বা মাইক্রোবাস)
টেকনাফ → সেন্ট মার্টিন (জাহাজ বা ট্রলার)
টেকনাফ থেকে প্রতিদিন কয়েকটি জাহাজ চলে, যা সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে ছেড়ে যায় এবং বিকেলে ফিরে আসে। তবে রাতযাপন করলে আগে থেকে হোটেল বুকিং করে রাখা ভালো।
থাকার ব্যবস্থা
সেন্ট মার্টিনে বিভিন্ন রকম হোটেল ও কটেজ পাওয়া যায়:
- Blue Marine Resort
- Coral View Resort
- Sea Inn
- Prince Heaven
তবে পিক সিজনে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) আগে থেকে বুকিং না করলে জায়গা পাওয়া কঠিন।
কিছু ভ্রমণ টিপস
পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন, দ্বীপে প্লাস্টিক দূষণ এখন বড় সমস্যা।
- সমুদ্র স্নানের সময় সতর্ক থাকুন, বিশেষ করে জোয়ারের সময়।
- প্রবাল বা সামুদ্রিক প্রাণী সংগ্রহ করা বা ক্ষতি করা নিষিদ্ধ ও অনুচিত।
- লোকাল গাইড বা হোটেল কর্মচারীদের থেকে তথ্য নিয়ে পরিকল্পনা করা সবচেয়ে ভালো।